YOUTUBE

দখুন একটি কমেডি নাটক। জামাই দাওয়াত

ইন্টারনেট থেকে তাকা উপার্জন করুন

eid mubarak

ক্লিক করুন আর টাকা উপার্জন করুন

ইন্টারনেট থেকে টাকা উপার্জন

ইন্টারনেট থেকে তাকা উপার্জন করুন

FollowLike Share It

Monday, August 19, 2013

এবার পাট বললেই বাংলাদেশ

পাটের জীবনরহস্য বা জিন নকশা (জিনোম সিকোয়েন্সিং) বের করার গবেষণায় এবার পূর্ণতা পেল বাংলাদেশ। দেশের একদল বিজ্ঞানীর এই কৃতিত্বের ফলে আগামী চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে কৃষকের হাতে রোগ প্রতিরোধী ও উন্নত পাটের জাত তুলে দেওয়া যাবে। এ গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম।মাকসুদুলের নেতৃত্বে তোষা পাটের জীবনরহস্য উন্মোচন হয়েছিল ২০১০ সালে। সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি চাষ হওয়া পাটের দুটি প্রধান জাতের মধ্যে এটি একটি। এবার তাঁরই নেতৃত্বে আরেকটি জাত দেশি বা সাদা পাটের জীবনরহস্য উন্মোচিত হলো। আর তাঁর দল ২০১২ সালে পাটের জন্য ক্ষতিকর একধরনের ছত্রাকের জীবনরহস্য উন্মোচন করায় উন্নত পাটের জাত উদ্ভাবনের দিকে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। আর এসবের স্বত্ব (পেটেন্ট) পেলে বিশ্বের যেকোনো স্থানে পাট নিয়ে গবেষণার জন্য বাংলাদেশ অর্থ পাবে। তখন পাট বললেই বাংলাদেশের কথা আসবে।পোকার আক্রমণের কারণে কৃষকেরা সাদা পাটের চাষ কমিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু এই পাটের আঁশের মান বেশ উন্নত, তা দিয়ে বস্ত্রশিল্পের উপযোগী সুতা উৎপাদনও সম্ভব। Untitled-12তাই সোনালি আঁশ পাটের নতুন আশা পেল বাংলাদেশ।দেশি সাদা জাতের পাটের জীবনরহস্যের ফলাফল ইতিমধ্যে বিশ্বের জৈবপ্রযুক্তিবিষয়ক সবচেয়ে বড় গবেষণাকেন্দ্র ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশনের (এনসিবিআই) কাছে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। আগামী তিন থেকে পাঁচ মাসের মধ্যে এই গবেষণার ফলাফল কোনো একটি আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশের প্রক্রিয়া শুরু হবে।শুধু তাই নয়, পাট ও ছত্রাকের জীবনরহস্য উন্মোচনের পর এ বিষয়ে মোট পাঁচটি গবেষণা ফলাফলের স্বত্বের (পেটেন্ট) জন্য বিশ্ব মেধাস্বত্ব সংস্থার (ডব্লিউআইপিও) কাছে আবেদন করেছে বাংলাদেশ। ইতিমধ্যে পাটের তন্তুর কার্যকারিতা নিয়ে দুটি এবং ছত্রাকের ওপর করা তিনটি গবেষণা স্বত্বের আবেদন চূড়ান্তভাবে গ্রহণ করেছে সংস্থাটি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রোববার বিকেলে গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দেশি পাটের জীবনরহস্য উন্মোচনের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, এই আবিষ্কারের ফলে সোনালি আঁশ দেশে সোনালি দিন ও কৃষকের মুখে রুপালি হাসি ফিরিয়ে আনবে।
প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘দেশের বিজ্ঞানীরা নিরলসভাবে কাজ করেছেন। পাটের পূর্ণাঙ্গ জীবনরহস্য এখন আমাদের হাতে। এটা এখন বাংলাদেশের সম্পদ। সরকার এ কাজে বিজ্ঞানীদের চাহিদামতো সহায়তা দিয়েছে। কিন্তু সাফল্যের পুরো কৃতিত্ব দেশের বিজ্ঞানীদের। তাঁদের এই সাফল্য দেশকে বিশ্বে আরও বেশি মর্যাদাবান করে তুলবে।’
সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, এই বিজ্ঞানীরা বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ও সরকারি সহায়তার জন্য গিয়েছিলেন। কিন্তু পাননি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি এই আবিষ্কারের স্বত্ব অর্জনের জন্য সরকারি উদ্যোগের কথা জানান। বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম আজ সোমবার সকাল ১০টায় তাঁদের আবিষ্কার সম্পর্কে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে পাট গবেষণা কেন্দ্রে সাংবাদিকদের অবহিত করবেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
ওই পাঁচটি গবেষণা ফলাফলের স্বত্ব পাওয়ার জন্য আরও কয়েক বছর বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হবে। এ ছাড়া আরও ১১টি গবেষণার স্বত্ব চেয়ে আবেদন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। পাটবিষয়ক ফলিত ও মৌলিক গবেষণা প্রকল্পের আওতায় তিনজন আইনজীবী এ জন্য বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করছেন। আর স্বত্বের বিষয়টি তদারক করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এ ব্যাপারে বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, আমাদের গবেষণার এখন প্রধান লক্ষ্য প্রতিকূল পরিবেশ ও জীবাণু প্রতিরোধক পাটের নতুন জাত উদ্ভাবন। এর আগে আমরা তোষা পাটের জীবনরহস্য উন্মোচন করেছিলাম। এবার দেশি পাটের জীবনরহস্য জেনে যাওয়ার ফলে এখন এ দুই জাতের মধ্যে শংকর করে নতুন উন্নত জাতের পাট উদ্ভাবন করা সম্ভব।
নতুন জাত উদ্ভাবনের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ: পাট ও ছত্রাকের জীবনরহস্য উন্মোচনকারী বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলমের নেতৃত্বে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা বর্তমানে কয়েক ধরনের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ জাত উদ্ভাবনের জন্য কাজ করছেন। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত এলাকায় চাষোপযোগী লবণসহিষ্ণু জাত, ছত্রাক প্রতিরোধক সাদা বা দেশি পাট ও স্বল্পতম সময়ে ফলন দিতে পারে এমন জাত উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা চলছে।
রাজধানীর মানিক মিঞা অ্যাভিনিউয়ে অবস্থিত পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের জৈব প্রযুক্তি গবেষণা কেন্দ্রে মূল গবেষণাটি হচ্ছে। আর মাঠপর্যায়ের গবেষণার জন্য দেশের তিনটি জেলায় গবেষণা হবে। মাকসুদুল আলম যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন জিনোম বিজ্ঞানীকেও এ গবেষণায় যুক্ত করেছেন। তাঁরা নানাভাবে পরামর্শ দিয়ে এ গবেষণাকে এগিয়ে নিচ্ছেন।
গবেষকদের সূত্রে জানা গেছে, জিনোম বিজ্ঞান বা জীবনরহস্য উন্মোচনের মাধ্যমে নতুন জাত উদ্ভাবনের জন্য বিশ্বব্যাপী অনেক ধরনের গবেষণা হচ্ছে। কিন্তু এখনো এ ধরনের কোনো জাত মাঠপর্যায়ে কৃষকের হাতে পৌঁছায়নি। সবগুলোই পরীক্ষামূলকভাবে চাষ হচ্ছে। পাটের জীবনরহস্য উন্মোচনের মাধ্যমে নতুন জাত উদ্ভাবনের এই গবেষণা সফল হলে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে প্রথম দেশ হিসেবে এ ধরনের জাতের চাষ শুরু করবে।
পাঁচটি গবেষণা স্বত্বের জন্য আবেদন: প্যাটেন্ট নম্বর ১
স্বত্ব এক. পাটের তন্তুর কার্যকারিতা:
লিগনিন নামের জটিল রাসায়নিক যৌগটি সূক্ষ্ম তন্তু উৎপাদনে একটি বড় বাধা। পাটতন্তুর কোষে প্রায় ১৫ শতাংশ লিগনিন থাকে। পাটে এই যৌগের উপস্থিতি কমানো সম্ভব হলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তন্তুটির ব্যবহার বাড়ানো যাবে। যেমন: কাগজ উৎপাদনকালে সেলুলোজ থেকে লিগনিন আলাদা করার প্রক্রিয়াটি ব্যয়বহুল এবং পরিবেশ দূষণের কারণ। আবার গবাদিপশুর পরিপাকেও লিগনিন একধরনের বাধা তৈরি করে। তাই জিনগত নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পাটে লিগনিনের উপস্থিতি কমানো প্রয়োজন। পাটে ২৬টি লিগনিন জিন শনাক্ত করা হয়েছে।
স্বত্ব: দুই. বিভিন্ন রোগের জন্য দায়ী উৎসেচক:
একটি পাটগাছ বা গাছের কোষে যেসব রোগ হয়, বর্তমান উদ্ভাবনের ফলে সেগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব হতে পারে। তবে স্থায়ী ও বড় ধরনের প্রতিরোধের জন্য উপযুক্ত জিন ও প্রোটিন শনাক্ত করতে হবে। পাটসহ অন্যান্য উদ্ভিদের রোগপ্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা ছিল এই উদ্ভাবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য।
স্বত্ব তিন. লিগনিন হ্রাসকারী জিন:
কাগজের মণ্ড থেকে লিগনিন দূর করার জন্য রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ করতে হয়। এতে নিউজপ্রিন্টের রং হলদে হয়ে যায়। উৎসেচক ব্যবহারের মাধ্যমে লিগনিন সরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। এ জন্য ম্যাক্রোফোমিনা ফ্যাসিওলিনা প্রজাতির ছত্রাক থেকে প্রয়োজনীয় ৩৬টি উৎসেচক পাওয়া গেছে। এগুলো জৈব জ্বালানি উৎপাদন, বস্ত্রশিল্প, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ কাজেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
স্বত্ব চার. সেলুলোজ বা হেমিসেলুলোজ হ্রাসকারী উৎসেচক:
বর্তমান উদ্ভাবনে ম্যাক্রোফোমিনা ফ্যাসিওলিনা ছত্রাক থেকে ১২২টি সেলুলয়েটিক উৎসেচক শনাক্ত করা হয়েছে, যেগুলো সেলুলোজ ও হেমিসেলুলোজ দূর করতে সাহায্য করে। এসব উৎসেচক ওষুধ, কৃষিপণ্য, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, জৈব জ্বালানি উৎপাদন ও অন্যান্য শিল্পে ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন: আলফা-ওয়ান, থ্রি-গ্লুকানেজ নামের একটি উৎসেচক ব্যবহার করা যাবে টুথপেস্ট, মাউথওয়াশ, ডেন্টাল জেল, চুয়িংগাম প্রভৃতি তৈরির উপাদন হিসেবে।
স্বত্ব পাঁচ. প্যাকটিন হ্রাসকারী উৎসেচক:
পেকটিনের উপস্থিতিতে ফলের নির্যাস সংগ্রহ ও শোধন-প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। তাই পেকটিন হ্রাসকারী উৎসেচক ফলজাত পণ্য ও ফলের রস এবং তেল উৎপাদনশিল্পে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়া চা, কফি ও কোকা উৎপাদন এবং ধোলাইকাজেও এসব উৎসেচকের গুরুত্ব রয়েছে। বর্তমান উদ্ভাবনে ম্যাক্রোফোমিনা ফ্যাসিওলিনা ছত্রাক থেকে প্যাকটিন হ্রাসকারী ২১টি উৎসেচক শনাক্ত করা হয়েছে।  

প্রথম আবিষ্কারের সেই কাহিনী পড়ুন

No comments: